শিরোনাম

জুমার দিনের ফযীলত এবং দুয়া কবুলের সময়।

সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে : বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০১৯ ১০:০৪:২৯ অপরাহ্ণ
জুমার দিনের ফযীলত এবং দুয়া কবুলের সময়।
জুমার দিনের ফযীলত এবং দুয়া কবুলের সময়।

জুমার দিনের ফযীলত এবং দুয়া কবুলের সময়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ-
– সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমু‘আহর দিনই হচ্ছে সবচাইতে উত্তম দিন।
– জুমুআ’হর দিন সকল দিনের সর্দার, সব দিনের চাইতে বড় ও আল্লাহর নিকট বড় মর্যাদাবান। এই দিনটি আল্লাহর কাছে ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতিরের চাইতে অধিক উত্তম।
– আদম আ’লাইহিস সালামকে এই দিনেই সৃষ্টি করা হয়েছিলো।
– এই দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিলো।
– এই দিনেই তাঁর তাওবাহ কবুল করা হয়েছিলো।
– এই দিনেই তিনি ইন্তিকাল করেছিলেন এবং
– এই দিনেই ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবে।
– জিন ও মানুষ ছাড়া প্রতিটি প্রাণী শুক্রবার দিন ভোর হতে সূর্যোদয় পর্যন্ত ক্বিয়ামাতের ভয়ে ভীত থাকে।
– এই দিন এমন একটি বিশেষ সময় রয়েছে, যদি কোন মুসলিম বান্দা নামাযের মধ্যে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে কোন অভাব পূরণের জন্য দুয়া করে, মহান আল্লাহ তাকে তা দান করেন।
– তোমরা জুমু‘আর দিন আমার ওপর বেশী পরিমাণ দুরূদ পাঠ কর। কেননা এ দিনটি হাজিরার দিন। এই দিনে ফেরেশতাগণ হাজির হয়ে থাকেন। যে বক্তি আমার ওপর দরূদ পাঠ করে তার দরূদ আমার কাছে পেশ করা হতে থাকে। (সুত্রঃ- আবু দাউদঃ ১০৪৬, তিরমিযীঃ ৪৯২, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৯, সহীহ)

জুমুআ’হর দিনে দুয়া কবুলের বিশেষ সময় কখন? জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জুমু’আর দিনে এমন বারটি সাআ’হ (মূহূর্ত/সময়/ঘন্টা) রয়েছে, এমন কোন মুসলিম বান্দা পাওয়া যাবে না, যে ঐ সাআ’হতে আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে, কিন্তু তাকে তা দেওয়া হবে না। অতএব, তোমরা ঐ সাআ’হকে আসরের পর শেষ সময়ে অনুসন্ধান কর।” (সুত্রঃ- সুনানে আন-নাসায়ীঃ ১৩৮৯, আবু দাউদ হাঃ ১০৪৭, সহীহ, শায়খ আলবানী। তিরমিযীঃ ১০৮৪।)

এই হাদীষ থেকে বুঝা যায়, জুমুআ’হর দিন অর্থাৎ, ফযর থেকে মাগরিব পর্যন্ত মোট সময়কে ১২-টি ভাগে বিভক্ত করে এর সর্বশেষ ভাগের সময়টি হচ্ছে দুয়া কবুলের সময়।
যেমন, ধরুন আজ ২৯-শে নভেম্বর ফযর ওয়াক্ত ৫ঃ০২ এবং মাগরিব ৫ঃ০৮। মোট সময় ৫ঃ০২-৫ঃ০৮=১২ ঘন্টা ৬ মিনিট। এই সময়কে ১২ দ্বারা ভাগ করলে আসে ১ ঘন্টা ৩০ সেকেন্ড। সুতরাং, আজকে বিকাল ৪ঃ০৭-৫ঃ০৮ পর্যন্ত এই এক ঘন্টা এক মিনিটের মাঝেই রয়েছে জুমআ’হর দিনের দুয়া কবুলের সেই বিশেষ মুহূর্ত।

জুমুআ’হর দিনে দুয়া কবুলের বিশেষ একটা সময় রয়েছেঃ জুমুআ’হর দিন সংক্ষিপ্ত একটা সময় আছে, সেই সময়ে বান্দা যা চাইবে তাকে তাই দেওয়া হয়। জুমুআ’হর দিনে সেই বিশেষ সময়টা কখন, এটা নিয়ে কয়েক প্রকার মত রয়েছে। কিছু আলেমের মতে সেই সময়টা হচ্ছে ইমাম জুমুআ’হর খুতবার জন্য মিম্বরে বসা থেকে জুমুআ’হর সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত সময়টা। আবার অন্য আলেমদের মতে, সেটা আসরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টুকু, বিশেষ করে দিনের শেষ ঘন্টা। দুই দল আলেম-ই তাদের মতের পক্ষে দলিল ও যুক্তি পেশ করেছেন, এজন্য উত্তম হচ্ছে এই দুই সময়েই বেশি বেশি করে নিজের জন্য, নিজের পরিবারের ও সমস্ত মুসলমানদের জন্য দুয়া করা। তবে আসরের পরে দিনের শেষের দিকে দুয়া কবুলের সেই সময়, এই মতটা শক্তিশালী, যার পক্ষে সহীহ হাদীস রয়েছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জুমুআ’হর দিনের বার ঘন্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে, তখন কোন মুসলমান আল্লাহর নিকট যেই দুয়া করে, আল্লাহ তাই কবুল করেন। তোমরা সেই মুহূর্তটিকে আসরের শেষে অনুসন্ধান কর।” সুনানে নাসাঈ, সুনানে আবু দাউদঃ ১০৪৮, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ।

আ’ব্দুল্লাহ ইবনু সালাম রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বসে থাকা অবস্থায় আমি বললাম, “আমরা আল্লাহর কিতাবে জুমুআ’হর দিনে এমন একটি মুহূর্ত সম্পর্কে উল্লেখ পেয়েছি যে, সেই মুহূর্তে কোন মুমিন বান্দা সালাতরত অবস্থায় আল্লাহর নিকট কিছু প্রার্থনা করলে, তিনি তার প্রয়োজন পূরণ করেন।” আ’বদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমার দিকে ইশারা করে বললেন, “সেটা এক ঘণ্টার সামান্য সময় মাত্র।” আমি বললাম, “আপনি যথার্থই বলেছেন, এক ঘণ্টার সামান্য সময়ই।” আমি বললাম, “সেটি কোন মুহূর্ত?” তিনি বলেন, “সেটি হলো দিনের শেষ মুহূর্ত।” আমি বললাম, “সেটা তো সলাতের সময় নয়?” তিনি বলেন, “হ্যা। মুমিন বান্দা এক সলাত শেষ করে বসে বসে অন্য সলাতের প্রতীক্ষায় থাকলে সে সলাতের মধ্যেই থাকে।” ইবনে মাজাহঃ ১১৩৯, মুসনাদে আহমাদঃ ২৩২৬৯, ‘হাসান সহীহ’, শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ।

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের মর্যাদা যেমন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমুআ’হর দিনের মর্যাদা ঠিক তেমন। এছাড়া রমজানের ক্বদরের রাত্রিতে যেমনিভাবে দুয়া কবুল হয়, ঠিক তেমনি শুক্রবারের সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও দুয়া কবুল হয়।” যাদুল মাআ’দঃ ১/৩৯৮।

সুতরাং দুয়া কবুলের সময়টা পাওয়ার জন্য উত্তম হচ্ছে, আসরের সালাত আদায় করে জায়নামাযে বসে থেকে মাগরিবের সালাতের জন্য অপেক্ষা করা এবং এই সময়ে বেশি বেশি দুয়া করা, বিশেষ করে সূর্যাস্তের পূর্বে দিনের শেষ ঘন্টায় অধিক পরিমানে দুয়া করা। উল্লেখ্য, এই সময়ে হাত তুলে কিংবা হাত না তুলে, ওযু থাকা অবস্থায় কিংবা ওযু ছাড়া, যেকোন অবস্থাতেই দুয়া করা যাবে। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দান করুক। আমিন।

Spread the love
Facebook Comments

Contact Us