ভয়ঙ্কর পার্থেনিয়াম বা ক্যারটগ্রাসের করালগ্রাসের শিকার হতে চলেছে সমগ্র দেশ। দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে গাজরঘাস। পার্থেনিয়াম আর সিঙ্গাপুর ডেইজি যেভাবে বিস্তার লাভ করছে, অচিরেই তারা সমস্ত স্থানীয় উদ্ভিদ হটিয়ে দেবে। যখন এদের ক্ষতিকর দিক স্পষ্ট হয়ে উঠবে, তখন জাতীয় বাজেটের বড় একটা অংশ ব্যয় করেও এদেরকে নিবৃত করা যাবে কিনা সন্দেহ আছে। এখন কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। তবে সে ভয়ানক দুর্দিন দিন দিন এগিয়ে আসছে অতিদ্রুত।
খুলনা। ১৯ এপ্রিল ২০১৮
আধুনিক মানবসভ্যতায় পরিবেশের ভারসাম্যহীনতাই প্রাণীজগতের যাবতীয় শারীরিক ও মানসিক কষ্টের মূল হোতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মারাত্মক হারে দূষণ ও পরিবেশে যা কিছু ভালো, সেগুলোর ক্রমাগত হ্রাসমানতা ও ক্ষতিকর বস্তুর অবাধ বিচরণ বারবার মানবসভ্যতার নিস্পৃহতা ও অচেতনতার দিকেই বারবার আঙুল তুলে দেখিয়েছে। বিষবৃক্ষ পার্থেনিয়ামের ব্যাপারে আমাদের অনাগ্রহও এই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিগত কয়েক বছরে পার্থেনিয়ামের অবাধ বৃদ্ধি ও রোগভোগের কারণ হয়ে ওঠাতেও আমরা সচেতন হয়ে উঠিনি। আজ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মানুষের; প্রতিটি বাড়িতে হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যালার্জি ইত্যাদি বায়ুঘটিত রোগের বাড়বাড়ন্ত; যে এলাকায় পার্থেনিয়ামের বাড়বাড়ন্ত সেখানেই চাষের প্রভূত ক্ষতি করছে এই পার্থেনিয়াম নামক আগাছা। পার্থেনিয়াম মেক্সিকোর আদিনিবাসী আগাছা। ধীরে ধীরে প্রায় সমগ্র বিশ্বেই করাল থাবা বসাচ্ছে এই পার্থেনিয়াম। বাতাসের মাধ্যমে পরাগরেণু ছড়িয়ে দূষণ ঘটায় এবং এই পরাগরেণু শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে বিভিন্ন গবাদি পশু ও মানুষ সহ সমস্ত প্রাণীর শরীরেই প্রবেশ করে। মানুষের শরীরে প্রবেশ করে পার্থেনিয়াম ডার্মাটাইটিস নামক চর্মরোগ, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যালার্জি ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি করে। এছাড়া আক্রান্ত গবাদি পশুর দুধ খেলে তা থেকে আমাদেরও বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
#কীভাবে_পার্থেনিয়াম_ধ্বংস_করবেন
১. তিন থেকে চার লিটার জলে এক কেজি লবণ মিশিয়ে স্প্রেয়ার মেশিনের সাহায্যে পার্থেনিয়াম গাছে স্প্রে করুন। দু তিন দিনের মধ্যেই আগাছাগুলো মারা যাবে।
২. শুকনো হয়ে গেলে আগুন ধরিয়ে দিন। আগুন ধরানোর সময় অবশ্যই প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করবেন।
৩. এছাড়া উপড়েও ফেলতে পারেন। তবে যে গাছগুলোতে এখনো ফুল দেখা যায়নি, মূলত সেই গাছগুলোই ওপড়ানো যেতে পারে। মরে শুকিয়ে গেলে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে।
৪. ওপড়ানোর সময় অবশ্যই নাক মুখ মাস্ক বা গামছা দিয়ে ভালোভাবে ঢেকে নিতে হবে, হাতে গ্লাভস পরতে হবে। এছাড়াও ফুলহাতা জামা ও ফুলপ্যান্ট পরে নেওয়া ভালো।
৫. যেকোন প্রক্রিয়ার পর জামাকাপড় ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে ও সাবান দিয়ে স্নান করে নিতে হবে।
পার্থেনিয়াম আধুনিক বিশ্বের রক্তবীজ। এই অসুরকে সমূলে ধ্বংস করার জন্য সমাজের সর্বস্তরের ব্যক্তিকেই এগিয়ে আসতে হবে। বাড়ির আশেপাশে, পুকুর ও নদীর ধারে- যেখানেই পার্থেনিয়াম থাকুক না কেন, তাকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের সবাইকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সমগ্র বিষ্ণুপুর মহকুমার জনসাধারণের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছায় আশা করি খুব শীঘ্রই পার্থেনিয়াম ধ্বংসের কাজ সম্পন্ন করতে পারব আমরা।
আসুন, আমরা সবাই মিলে একটা দূষণমুক্ত, রোগমুক্ত পরিবেশ গড়ে তুলি।
Facebook Comments