মাছের ঘেরে চোর এবং আইলের সবজি রক্ষায় ইঁদুর ঠেকাতে গুনার তার ঝুলিয়ে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রেখেছিলেন ঘের মালিক জের আলী। তার ওপর ছিল না কোনো পাহারা ও সতর্কতামূলক চিহ্ন। সেই তারে জড়িয়ে মারা যান ইকবাল শেখ (৩৮) নামে আরেক ঘের মালিক। তাঁকে খুঁজতে গিয়ে একইভাবে প্রাণ যায় তাঁর বড় ভাই মোদাচ্ছের শেখের (৪৮)।
মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে গত সোমবার রাতে খুলনার রূপসা উপজেলার আনন্দনগর গ্রামে। দু’জনের প্রাণহানিতে শোকে মুহ্যমান তাদের পরিবার ও গ্রামবাসী। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে গেছেন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া ঘের মালিক জের আলী। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিহতদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মাতম চলছে।
কাঁদতে কাঁদতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন ইকবালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম ও মোদাচ্ছেরের স্ত্রী রুমা বেগম। মায়ের কান্না দেখে ইকবালের দুই শিশুসন্তান শাকিলা ও ওজাইফা শেখ এবং মোদাচ্ছেরের ছেলে জাহিদুল শেখও কাঁদছে। ইকবালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুপুরে আমি স্বামীর খাবার দিয়ে এসেছিলাম। এই খাবারই যে তাঁর জীবনের শেষ খাওয়া হবে কে জানত! আমার স্বামীর আয় দিয়েই সংসার চলত। এখন আমরা কী করব?
এদিকে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু রূপসাতেই নয়, জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চিংড়ি বা বিভিন্ন মাছের ঘের পাহারায় ঘের মালিক ও কর্মচারীরা গুনার তার ঝুলিয়ে দেন। এরপর রাতে সেই তারে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগ বা পুলিশ কখনোই কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
এ বিষয়ে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান সমকালকে বলেন, ঘেরের টংঘরে লাইট, ফ্যান এবং অক্সিজেন সরবরাহের মেশিন চালানোর জন্য কেউ কেউ বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়। কিন্তু তারা কোনোভাবেই গুনার তার ঝুলিয়ে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে না, এটি আইনের লঙ্ঘন। এটি বন্ধে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।