এদিকে প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় রিমালের তান্ডবে কলাপাড়ার ১৬৭১টি ঘর-বাড়ী সম্পূর্ন এবং ২৬ হাজার ৯টি ঘর-বাড়ী আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষয় ক্ষতির পরিমান ৩০ কোটি টাকা। উপজেলায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা দাড়িয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন সূত্র। দুর্গত এসব মানুষের কাছে ত্রান সুবিধা পৌঁছে দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনসহ জনপ্রতিনিধিরা।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, ঘূর্নিঝড়ের প্রভাবে অস্বাভাবিক জ্বলোচ্ছাস ও অতিবর্ষনে ধূলাসার, লালুয়া, বালিয়াতলি, লতাচাপলি, ধানখালী, চম্পাপুর, মহিপুর ও নীলগঞ্জ ইউনিয়নে ৪,৬৯০টি পুকুর, যার আয়তন ৪১০.২৫ হেক্টর এবং ৭৭৮টি ঘের, যার আয়তন ৪৩৮.৮০ হেক্টর, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মৎস্য খাতে প্রায় ২৫ কোটি ৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয় সূত্র জানায়, রিমালের তান্ডবে অসংখ্য বৈদ্যুতিক খূঁটি ভেঙ্গে পড়েছে, গাছ পড়ে তার ছিড়ে গেছে, ট্রান্সফরমার নষ্ট হয়েছে, মিটার ও ইনসুলেটর ভেঙেছে এতে উপকূলের বিদ্যুৎ সরবরাহ ভেঙ্গে পড়েছে। যাতে ক্ষতির পরিমান ১০ লক্ষ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরাফাত হোসেন জানান, রিমালের তান্ডবে কলাপাড়ায় ১৮০ হেক্টর আবাদি জমির শাক সবজি, ৫৮ হেক্টর জমির পাট, ২৫ হেক্টর জমির পেঁপে, ৫০ হেক্টর জমির কলা, ১০ হেক্টর জমির তিল, ১৫০ হেক্টর জমির আম, ১০৬ হেক্টর জমির আউশ বীজতলা, ১৭৮ হেক্টর জমির আউশ আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে কৃষি খাতে মোট ক্ষতির পরিমান ৮ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন জানায়, ঘূর্নিঝড় রিমালের আঘাতে ১৮০০ কি.মি. সড়ক সম্পূর্ন ক্ষতিগ্রস্ত, ৪০০ কি.মি. সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমান ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া জোনের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাহআলম বলেন, ঘূর্নিঝড় রিমালের তান্ডবে উপকূলের ৩০ টি স্পটে ১০ কি.মি. বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান অনুমান ১৩ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত গৈয়াতলা ও জালালপুর ৪৬ নম্বর পোল্ডার, ধূলাসার ও বালিয়াতলি ৪৭/৪ নম্বর পোল্ডার, রাঙ্গাবালীর চরমোন্তাজ ৫৫/৪ নম্বর পোল্ডার, আন্ডার চর ও চালিতাবুনিয়া ৪৯ নম্বর পোল্ডার।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মনিরুজ্জামান জানান, উপজেলার ৪টি কলেজ, ১২টি স্কুল ও ২৫টি মাদ্রাসা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অচ্যুতানন্দ দাস ¬জানায়, ৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আংশিক ক্ষতি হয়েছে, যাতে ক্ষতি হয়েছে ৩৩ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। উপজেলা প্রানী সম্পদ কার্যালয় সূত্র জানায়, রিমালের তান্ডবে মৃত/ ভেসে যাওয়া ভেড়ার সংখ্যা ৯৬০টি, ছাগল ৩০টি, মহিষ ৪টি ও গরু ৪টি, হাঁস ৪৬০টি, মুরগি ২৪৮টি। এতে প্রানী সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান প্রায় ৭ লক্ষ টাকা। বন বিভাগের কলাপাড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মনিরুল হক বলেন, ঘূর্নিঝড় রিমালের তান্ডবে ১১০ সি.কি.মি. গোলপাতা গাছ, ৩১৪ সি.কি.মি. স্ট্রীপ বাগান, ২০ হেক্টর ঝাউবাগান, ১৭০ হেক্টর ম্যানগ্রোভ বাগানসহ সামাজিক বনায়নের ৩৪ লক্ষ ৩৫৯ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা দুর্যোগ ও ত্রান কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ঘূর্নিঝড় শেষে দুর্গত মানুষের সহায়তায় ১০০ মে.টন চাল ও নগদ দেড় লক্ষ টাকা হাতে পেয়েছি। এছাড়া আরও নগদ ৫ লক্ষ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য ২ লক্ষ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লক্ষ টাকা, আরও ২০০ মে.টন চাল ও ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বদা দুর্গত মানুষের পাশে আছি। আমরা দুর্যোগকালীণ সময়ে ও পরে দুর্গত মানুষকে শুকনো খাবার, ত্রান সুবিধাসহ রান্না করা খিচুড়ী প্যাকেট সরবরাহ করেছি। দুর্গত মানুষকে ত্রান দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী দুই/এক দিনের মধ্যে কলাপাড়া পরিদর্শনে আসার কথা রয়েছে।