পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে তদবির বাণিজ্য ঠেকাতে ব্যাপক প্রস্তুতি ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কঠোর হুশিয়ারির পরও ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিয়োগ বাণিজ্য চলছে।
ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগে চার জেলা থেকে এসপির বডি গার্ডসহ ১১ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
টাঙ্গাইলে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা লেনদেনের অভিযোগে পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মাদারীপুরে নিয়োগের কথা বলে কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মাদারীপুরে এসপির বডি গার্ডসহ চারজনকে ৭২ লাখ টাকাসহ আটক করেছে পুলিশ সদর দফতরের তদারকি টিম।
এছাড়া নড়াইলে ভাতিজার নিয়োগের জন্য পুলিশ সুপারকে সাত লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার চেষ্টাকালে নুরুল ইসলাম নামে একজনসহ সাতজনকে আটক করেছে পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা হলে পুলিশ সদস্যদের ঘুষ নেয়া ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা কমবে। এদিকে, ঘুষ ও তদবির ঠেকাতে ৬৪ জেলায় শক্তিশালী তদারকি কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দফতর।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা যুগান্তরকে বলেন, কনস্টেবল নিয়োগে কিছু অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। এরমধ্যে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও জড়িত। অভিযুক্তদের ক্লোজ করে দূরবর্তী ইউনিটে বদলি করা হয়েছে। তদন্তের পর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগে কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, ওই কর্মকর্তা পুলিশ লাইন ম্যাচের ম্যানেজার, কনস্টেবল জাহিদ হোসেন, এসপির বডি গার্ড কনস্টেবল নুরুজ্জামান সুমন, ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক গোলাম রহমান ও পুলিশ লাইন হাসপাতালের স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালার মাধ্যমে ৯০ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি চারজনের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা উদ্ধারও করেছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ সদর দফতর।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালদার সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ লাইনের ম্যাস ম্যানেজার জাহিদ হোসেন মোটা অঙ্কের ঘুষ নিয়ে কনস্টেবল নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করছেন বলে তারা ২৪ জুন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারেন। ওই দিনই ডিআইজি ঢাকা রেঞ্জ ও মাদারীপুর সদর থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে আটক করা হয়। পরদিন একই অভিযোগে বডি গার্ড নুরুজ্জামান সুমনকে ঘুষের টাকাসহ আটক করা হয়। তিনি আরও বলেন, ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে ট্রাফিক পরিদর্শক গোলাম রহমান ও স্বাস্থ্য সহকারী পিয়াস বালাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সুব্রত কুমার বলেন, তার (দেহরক্ষী) ব্যক্তিগত অপকর্মের দায়ভার একান্ত নিজের। সরকারি কাজের বাইরে পুলিশের ব্যক্তিগত অপকর্মের দায়ভার বাহিনী নেবে না।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, কনস্টেবল পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রার্থীদের সঙ্গে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করার অপরাধে দু’জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতার অপরজন পুলিশের এসআই মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ চক্রের সঙ্গে শেরপুর জেলায় কর্মরত এসআই মোস্তাফিজুর রহমানের ব্যাপারেও তদন্ত চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জামালপুর আদালতে কর্মরত এসআই মোহাম্মদ আলী ও কথিত সাংবাদিক খায়রুল বাশারের স্ত্রী মাহানাতুল আরেফিন সুমিকে ২১ জুন গ্রেফতার করে টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। তারা এখন কারাগারে রয়েছে।
জানা গেছে, টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলার বাড্ডা গ্রামের মো. কবির মিয়া নামের এক প্রার্থীকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকার চুক্তি করে চক্রটি। জেলার গোয়েন্দা পুলিশের ওসি শ্যামল কুমার দত্ত জানান, এ চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যদের বের করতে এসআই মোহাম্মদ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করেছেন। ১ জুলাই রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত। নাটোর প্রতিনিধি জানান, ভাতিজাকে পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি দিতে পুলিশ সুপারকে উপহার প্যাকেটে সাত লাখ টাকা ঘুষ দেয়ার চেষ্টাকালে চাচা নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও অর্থের বিনিময়ে পুলিশের বিভিন্ন পদে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রতারণার অভিযোগে চার দালালসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে নাটোর জেলা পুলিশ। গ্রেফতাররা হল- নাইম ইসলাম, রাব্বী আলী, আব্দুল হাদি, ফজলুল রহমান ওরফে রনি, রেজাউল ইসলাম, সুমন আলী, রওশন মণ্ডল। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন।
ধামরাই প্রতিনিধি জানান, ঢাকা জেলা কোটায় ধামরাইয়ে কনস্টেবল নিয়োগ দেয়ার নামে বিভিন্নজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে স্বপন রাজবংশী নামে এক প্রতারক ও এক চাকরি প্রার্থীকে আটক করেছে ধামরাই থানা পুলিশ। শুক্রবার রাতে বালিয়া ইউনিয়নের রামরাবণ গ্রাম থেকে তাদের আটক করা হয়। ধামরাই থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
Facebook Comments