নাটোরে কলেজছাত্রকে বিয়ে করে সারা দেশে ব্যাপক ভাইরাল হওয়া জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজিপুর মোজাম্মেল হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার আত্মহত্যা করেছেন। রোববার সকালে নাটোর শহরের বলারীপাড়ার ভাড়া বাসায় তিনি আত্মহত্যা করেন। তবে হত্যা না আত্মহত্যা বিষয়টি নিশ্চিত হতে আটক স্বামী মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
স্বামী মামুনের বক্তব্য
রোববার সকালে পুলিশ মামুনকে আটক করে। আটকের সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে মামুন বলেন, খায়রুন নাহারের বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিওতে ১৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ রয়েছে। এরই মধ্যে তার বাবার বাড়িতে থাকা বড় ছেলে ৬ লাখ টাকা দামের একটি মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। এসব বিষয়ে খায়রুন নাহার মানসিকভাবে খুবই চাপে ছিল।
তিনি দাবি করেন, শয়ন ঘরে স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে তিনি ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়ে রাত সাড়ে ৩টার সময় বাসা থেকে বের হন।
এ সময় নামাজের জামাত কয়টায় জানতে চাইলে তিনি প্রথমে বলেন, ফজরের জামাত ৪টায়, পরে বলেন সকাল সাড়ে ৫টায়!। নামাজের জন্য বাহিরে গিয়েছিলেন দাবি করলেও তিনি ফজরের নামাজ পড়েননি বলে স্বীকার করেছেন।
সকালে কলেজে যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে ডেকে দিতে মোবাইলে কল দিলে স্ত্রী কল রিসিভ না করায় তিনি বাসায় ফিরেন। বাসায় ফিরে ড্রয়িং রুমে স্ত্রীকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলতে দেখে হাতের কাছে কিছু না পেয়ে পকেটে থাকা গ্যাস লাইট দিয়ে ওড়নায় পুড়িয়ে স্ত্রীকে নামান। বুঝতে পারেন স্ত্রী আত্মহত্যা করেছেন।
নিহত সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহারের চাচাতো ভাই সাবির উদ্দিন বলেন, অসম বয়সের বিয়ে হওয়ায় খায়রুন নাহারের কলেজের কোনো সহকর্মী তার সঙ্গে কথা বলতো না। বাবা-মাসহ আত্মীয়স্বজনরা যোগাযোগ রাখতো না। বিয়ের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় খায়রুন নাহার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন।
তবে সাবির উদ্দিনের স্ত্রী নূরজাহান একই সময়ে বলেন, খায়রুন নাহারের স্বামী মামুন সবাইকে বলেছেন সকালের দিকে খায়রুন নাহার মারা গেছে, কিন্তু তিনি সকাল সাড়ে ৮টায় এসে দেখেছেন লাশের শরীর একেবারে শক্ত হয়ে আছে। অনেক আগে মারা গেলে যেমন শক্ত হয়ে যাওয়ার কথা ঠিক তেমনটা। খায়রুন নাহার আত্মহত্যা করেছে এটাও তিনি মানতে রাজি নন।
নিহত খায়রুন নাহারের ভাতিজা নাহিদ হাসান বলেন, তার ফুফু খায়রুন নাহারের নতুন এই বিয়ের পর থেকেই মামুন তার ফুফুর কাছ থেকে পালসার মোটরসাইকেলসহ প্রায় ৫ লাখ টাকা নিয়েছে। নতুন করে আবার আরওয়ান-৫ মোটরসাইকেল কিনে দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে চাপ দিচ্ছিল।
তিনি বলেন, মামুন নেশা করত। চার দিন আগে গুরুদাসপুরে নেশা গ্রহণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে খাইরুন নাহারের খালাতো ভাই ফারুক হোসেন, মামুনসহ কয়েকজনকে মারপিট করে ও কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনায় গুরুদাসপুর থানায় মামুনসহ কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মামুন ও খায়রুন নাহারের মধ্যে কয়েক দিন থেকে মনোমালিন্য চলছিল।
তবে গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল মতিন এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন সেই মামলায় মামুন অভিযুক্ত নয়।
Facebook Comments