বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখিকা আগাথা ক্রিস্টির অমর সৃষ্টি ‘মাউসট্রাপ’ চলছে রয়েল থিয়েটার হলে। সন্ধ্যার পর তিন পাউন্ডে টিকিট কাটা দর্শকের ভিড় নটিংহামের সিটি সেন্টারে। মঞ্চনাট্য, সঙ্গীত আর শিল্প-সাহিত্যে ইংল্যান্ডের অন্যান্য শহরের চেয়ে ভিন্ন নটিংহাম। সপ্তাহজুড়েই শহরে কোনো না কোনো অনুষ্ঠান লেগেই থাকে- আজ যেমন এখানে রিভার টেন্টের পাশে হচ্ছে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। এখানকার মিডিয়ায় ম্যাচের ফেভারিট অ্যারন ফিঞ্চের অস্ট্রেলিয়া। সাংবাদিকদের সামনে এসে মাশরাফিও প্রতিপক্ষকেই এগিয়ে রেখেছেন। কিন্তু নটিংহাম তো একটু নাটক পছন্দ করে, রবিনহুডের চরিত্রে কাউকে দেখতে পছন্দ করে। তাই এখানেই আজ এ ম্যাচেই ‘নটিংহামের রবিনহুড’ হয়ে যাক না সাকিব আল হাসান! দুটি পয়েন্ট নিয়ে সেমির পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাক। ‘কাজটি কঠিন, অস্ট্রেলিয়ার বোলিং-বৈচিত্র্য অনেক। তবে আমাদের দলের প্রত্যেকে বিশ্বাস করে যে ওদের হারানো সম্ভব। এই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আমরা মাঠে নামব।’

ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে মাশরাফি জোর দিয়ে এ কথা বললেও খোঁজ নিচ্ছিলেন আবহাওয়ার। কেননা, এখানে আসার পথ থেকেই আকাশের মুখ ভারি। আবহাওয়া রিপোর্ট বলছে, আজও বৃষ্টি হবে। তবে ঘণ্টা ধরে বললে ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের শঙ্কা নেই। যার অর্থ, ম্যাচ মাঠে গড়াবে, তবে কার্টেল ওভারের প্রস্তুতিটা নিয়েই রাখতে হবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর পর অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ছক কষতে বসার জন্য খুব বেশি সময় হাতে পাননি মাশরাফি।

তবে অসিদের সম্পর্কে একেবারে যে তার ধারণা নেই, তা তো আর নয়। বিপিএলে ওয়ার্নার-স্মিথ খেলে গেছেন। আইপিএল থেকে সাকিবও ওদের সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিয়ে এসেছেন। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার কিছু ম্যাচের বাছাই করা ভিডিও ল্যাপটপে রেখে সবাইকে দেখিয়েছেন কম্পিউটার অ্যানালাইসিস্ট শ্রী। সেটা দেখেই মাশরাফির ধারণা, দু’দলের পার্থক্যের জায়গাটি বোলিংয়েই। প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক- দুই পেসার দারুণ ফর্মে। স্পিন বোলিংয়েও তাদের হাতে নাথান লায়ন আর অ্যাডাম জাম্পার মতো কবজি ঘোরানো বোলার রয়েছে।

এ আসরে অস্ট্রেলিয়ার দুর্বলতা ধরা পড়েছে কেবল ভারতের কাছেই। সাড়ে তিনশ’ রানের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে অসিদের পরাস্ত করা গিয়েছিল। তাই আজকের ম্যাচেও কোহলিদের ওই ফর্মুলাই প্রয়োগ করার ইঙ্গিত দিয়েছেন মাশরাফি। যেহেতু দলের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা ফর্মে আছেন, আর সাকিবের সঙ্গে সদ্য লিটনও যোগ দিয়েছেন; সেহেতু ব্যাটিংয়ে বড় স্কোর গড়ার লক্ষ্য থাকছে আজ টাইগারদের। এর পরও কৌশলগত কারণেই একাদশে দুটি পরিবর্তন আনা হতে পারে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গায় রুবেল হোসেন আর মোসাদ্দেক হোসেনের জায়গায় খেলতে পারেন সাব্বির রহমান। দল সূত্রে জানা গেছে, সাইফউদ্দিনের হালকা চোট রয়েছে। এ জন্যই তাকে বিশ্রাম দেওয়ার কথা ভাবছে টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে একাদশের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আজ মাঠে নামার আগে পিচ দেখে।

ট্রেন্ট ব্রিজে এর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বছর নয়েক আগে একটি ম্যাচই খেলেছিল বাংলাদেশ। বিশ্রীভাবে হারতে হয়েছিল টাইগারদের তখন। এখানে আসার পর তাই সেই তেতো অভিজ্ঞতাই মনে পড়েছিল তাদের। এই মাঠের আকার নিয়েও সূক্ষ্ণ একটা সমীকরণ রয়েছে। কার্ডিফ, ব্রিস্টল কিংবা টনটনের মতো ছোট আকারের বাউন্ডারি নেই এখানে। মাঠের যে কোনাটি সবচেয়ে ছোট, তারও দূরত্ব ৬২ মিটার। সবচেয়ে বড় বাউন্ডারির দড়ি পাতা ৭৭ মিটারে! তবে বাউন্ডারির আকার নয়, মাশরাফিদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে মাঠের পাঁচটি কোনা। এই কোনাগুলোতে ফিল্ডার সাজানোর ব্যাপারে দারুণভাবে কৌশলী হতে হবে অধিনায়ককে। কার্ডিফে যে ভুলের কারণে বেশ কিছু রান গলে গিয়েছিল ফিল্ডিংয়ে, সেই ভুল এখানে মোটেই করা যাবে না। টিম মিটিংয়েও সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন কোচ স্টিভ রোডস।

অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ওয়ার্নার আর ফিঞ্চকে শুরুতে ফিরিয়ে দিতে পারলে ম্যাচটি যে সহজ হয়ে যাবে, সেটাও টিম মিটিংয়ের আলোচনায় এসেছে। আজকের ম্যাচে সাকিব আল হাসানকে বিশেষভাবে টার্গেট করবে অস্ট্রেলিয়া- এমন একটা ধারণাও মিলেছে। গতকাল নেটে এসে শুধু স্পিনারদেরই অনুশীলন করছিলেন ওয়ার্নাররা। সাকিবের ব্যাটিংয়ের কিছু ফুটেজ নিয়েও চলছে তাদের চুলচেরা বিশ্নেষণ। শেষবার সেই পন্টিং-হেডেনদের আমলে বাংলাদেশের সঙ্গে ওয়ানডে খেলা হয়েছিল অসিদের। তারপর এ কথা-সে কথা বলে তো আর খেলাই হয়নি ওয়ানডেটা। তাই দু’দলের ২০ ম্যাচের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার ১৮টি আর বাংলাদেশের একটি জয়ের অনুপাতটা আর বদলায়নি। কার্ডিফে সেই একবারই ২০০৫ সালে অসিদের বধ করা গিয়েছিল, সেদিন কার্ডিফের রবিনহুড হয়েছিলেন আশরাফুল, সেটা ছিল ১৮ জুন। আজ ২০ জুন, কার্ডিফের বদলে নটিংহাম। আজও কি তেমন একটি দিন আসবে, আজকের রবিনহুড কি হতে পারবেন সাকিব? দেখার অপেক্ষায় থাকবে গোটা বাংলাদেশ। সূত্রঃ সমকাল