রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজতর করতে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় শুরু হয় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা। এর পর প্রণয়ন করা হয় বিস্তারিত নকশা। এরও পরে মাঠপর্যায়ে নির্মাণকাজ শুরুর আগেই বিভিন্ন ধাপে আরও অনেক প্রক্রিয়া সম্পাদিত হয়। এসব কাজে সময় গেছে ৮ বছর; ব্যয় হয়েছে একশ কোটি টাকা।
এর পর নির্মাণকাজ শুরুর আগে অর্থাৎ প্রকল্পটি দৃশ্যমান হওয়ার আগেই বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এক্সপ্রেসওয়ের নামে একশ কোটি টাকা পানিতে ফেলা হলো। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক সম্প্রসারণ করা হবে। এ জন্য আসছে নতুন প্রকল্প। আর প্রকল্প শুরুর আগে সঙ্গত কারণেই ফের শুরু হবে সমীক্ষাও।
এ বিষয়ে সওজের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান আমাদের সময়কে বলেন, হ্যাঁ, প্রকল্পটি বাতিলের খবর আমরাও শুনেছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এখন সার্ভিস রোডসহ সম্প্রসারণ করা হবে। সমীক্ষার পর সিদ্ধান্ত হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। সময় বাঁচাতে তাই এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সওজ। ২০১৩ সালের ১৩ মার্চ এ সংক্রান্ত প্রস্তাবে অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দেয়। এর পর সমীক্ষা পর্বসহ নানা ধাপ সম্পন্ন হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে আসে সেতু বিভাগের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নের ধাপ।
সওজের মাধ্যমে প্রকল্পটি অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপে সেতু বিভাগ অবশ্য পরে পিছু হটে। পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশন অব ইন্টারেস্ট আহ্বান এবং ভিজিএফ (ভায়াবিলিটি গ্যাপ ফান্ডিং) চূড়ান্তকরণও সম্পন্ন হয়। এর কিছুদিন পর যখন নির্মাণকাজের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা, তখনই ঘোষণা আসে প্রকল্পটি বাতিলের।
অর্থ বিভাগে পাঠানো সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সাম্প্রতিক চিঠিতে বলা হয়েছে, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগ কর্তৃক ভিজিএফ অনুমোদন দেওয়া হয়। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় বিস্তারিত সমীক্ষা ও নকশাও প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্পটি বাতিল করে এখন ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কের উভয় পাশে পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণের জন্য তথ্য জোগাড় এবং বৈদেশিক অর্থায়ন সংগ্রহে পিডিপিপি প্রণয়ন করা হবে।
২০১৩ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত সমীক্ষা প্রকল্পের রিপোর্ট ২০১৫ সালে জমা দেওয়া হয়। ২১৭ কিলোমিটারের এ পথে ৩টি অ্যালাইনমেন্ট ও ৫টি অপশনের কথা বলা হয়। এর পর এ সংক্রান্ত একাধিক বৈঠকের পর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সমান্তরালে ও উড়ালপথ সমন্বয়ে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এর পর ২০১৬ সালের ২৩ অক্টোবর এ সংক্রান্ত ডিজাইন জমা দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এর পর প্রকল্পের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার নিয়োগ করে ৩টি প্যাকেজে বিভক্ত করার সুপারিশ আসে।
প্যাকেজ-১ ঢাকা-কুমিল্লা ৮৪ কিলোমিটার, প্যাকেজ-২ কুমিল্লা-ফেনী ৫২.৮০ কিলোমিটার এবং প্যাকেজ-৩ ফেনী-চট্টগ্রাম ৮০.৯৫ কিলোমিটার। এর পর ২০১৮ সালের ১৫ মে প্রকল্পের অর্থায়নে ভিজিএফ প্রদানে নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, ভিজিএফের পরিমাণ প্রতিটি প্যাকেজের মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৩০ শতাংশের মধ্যে হতে হবে। তবে ভিজিএফের পরিমাণ কমাতে নির্ধারিত টোলের হার বাড়াতে পারবে না বিনিয়োগকারী।
পিপিপি কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত প্রকল্পব্যয় মানে ১৯ হাজার ৯৮২ কোটি টাকার ৩০ শতাংশ, ৫ হাজার ৯৯৪ কোটি টাকা ভিজিএফ হিসেবে দেওয়ার কথা সরকারের। এসব প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পর এখন বলা হচ্ছে, প্রকল্পটি বাতিল। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে হাইস্পিড ট্রেন চালু হবে যাত্রীদের জন্য। আর সওজের অধীনে মহাসড়ক বর্ধিত করা হবে। তবে এক্সপ্রেসওয়ে হলে যাত্রীসহ পণ্য পরিবহনের সময় বাঁচানোর সুবিধাটি থাকছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। কারণ রাস্তার ধারে বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনার কারণে মহাসড়কে যানজট হয়।
আর্থ-বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে চার লেনে রূপান্তর করা হলেও যানবাহন বৃদ্ধির চাপ চার থেকে পাঁচ বছরের বেশি সামলানো সম্ভব নয় মহাসড়কটির পক্ষে। এ জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের যুক্তি দেখিয়ে এত দূর এগিয়েছিল সওজ, যা এখন ধরা দিয়েছে আর্থিক অপচয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের প-শ্রম হিসেবে।
Facebook Comments