দেশে রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন দিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। শর্তপূরণ সাপেক্ষে সবার আগে এ খাতে লাইসেন্স পেয়েছে ‘পিকমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রথম লাইসেন্স পাওয়া প্রতিষ্ঠানটি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন পিকমির বিজনেস অপারেশন্স বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার শরিফুল ইসলাম তারেক। তিনি জানান, বিআরটিএর নিবন্ধন পেতে অনলাইনে যথাযথভাবে আবেদন করেছিলেন। অনুমোদনের আগে ১০০ জন চালক ও বাহনের নিবন্ধনের বিস্তারিত জমা দিয়েছিল পিকমি।
আর বিআরটিএর পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী জানান, রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিনে ‘পিকমি’ আবেদন করেছিল। ১ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধন পেয়েছে। বিআরটিএর কাছ থেকে ২৪ জুন এ বিষয়ে অনুমোদন পেলেও রোববার সংশ্লিষ্ট ফি জমা দেয়ার পর সরকারের দিক থেকে কোম্পানিটির সেবার অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ হয়।
জানা গেছে, ১৬টি প্রতিষ্ঠান কাগজে-কলমে বিআরটিএর কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করে। ২৬ জুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডাকা হয়। তাদের অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়।আবেদন প্রক্রিয়াটিও দেখানো হয়। এরপর মঙ্গলবার একটি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত ফি দিয়ে আবেদন করেছিল।
নিবন্ধন পাওয়া ‘পিকমি’ ছাড়াও রাজধানীতে উবার, পাঠাও, সহজ, ওভাইসহ অন্তত ২৫টি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান এবং কয়েক হাজার যানবাহন এই খাতের সঙ্গে যুক্ত। তবে এত দিন খাতটি কোনো আইনি কাঠামোর মধ্যে ছিল না। খাতটিকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে সালে রাইড শেয়ারিংয়ের লাইসেন্স দিতে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জুনে। পরের বছর ১৫ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পায়।
প্রথম দফায় করা নীতিমালায় একজন চালককে কেবল একটি কোম্পানির নেটওয়ার্কে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়া হয়। সব রাইড শেয়ারিং কোম্পানি একযোগে এর বিরোধিতা করে। তাতে করে নীতিমালার এই অংশটিতে পরিবর্তন আসে।তাছাড়া এই সময়ে নিবন্ধনের প্রক্রিয়াও ডিজিটাল করা হয়। ফলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে করা আগের সব আবেদন বাতিল হয়ে গেছে।
এ–সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা গত বছরের ১৫ জানুয়ারি অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এরপর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নীতিমালাটি গত বছরের ৮ মার্চ থেকে কার্যকরের ঘোষণা দেয়া হয়।
নীতিমালা অনুযায়ী, এই খাতের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও যানবাহনের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু বিআরটিএর কারিগরি প্রস্তুতি না থাকায় নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি শুরুতেই বাধাগ্রস্ত হয়। পরে বিভিন্ন সময় নিবন্ধনের জন্য বিআরটিএর কাছে মোট ১৬টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। কিন্তু কোনো প্রতিষ্ঠানই নীতিমালার সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানকেই নিবন্ধন দেয়নি সংস্থাটি।
এখন নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রেও নীতিমালার ‘খ’ অনুচ্ছেদের ১ নম্বর শর্তটি শিথিল করা হয়েছে। শর্তটি হচ্ছে, রাইড শেয়ারিং অ্যাপে এমন একটি বোতাম বা অপশন রাখতে হবে, যা স্পর্শ করলেই মোটরযান চালক ও যাত্রীর জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) অবস্থান সরাসরি জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) চলে যাবে।
বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সম্প্রতি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিআরটিএ। কিন্তু একেক প্রতিষ্ঠানের অ্যাপ একেক রকম হওয়ায় এবং এটি নিশ্চিত করার জন্য কিছু আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হওয়ায় এটি এখনই চালু করা সম্ভব নয় বলে পুলিশ জানিয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কাজটি দ্রুত শেষ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। পরে বিআরটিএ আপাতত ৯৯৯–এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার শর্তটি শিথিল রেখেই নিবন্ধনকাজ শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০১৬ সালে দেশে প্রথম রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হয়। প্রথম দিকে বিআরটিএ এই সেবার বিরোধিতা করে একে ‘অবৈধ’ ঘোষণা করে এবং এর বিপক্ষে অবস্থান নেয়। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপে বিআরটিএর অবস্থান বদল হয়। তখনই এটিকে একটা নীতিমালায় আনার কথা ওঠে।পরে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সংস্থাটি রাইড শেয়ারিংয়ের লাইসেন্স দিতে নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হয়।
Facebook Comments