ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে তেলবাহী জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ বিস্ফোরণের ঘটনায় নিখোঁজ চারজনের মধ্যে জাহাজের গ্রিজার আব্দুস সালাম হৃদয়ের লাশ উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড। আজ রবিবার দুপুরে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজের ইঞ্জিন কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। হৃদয় হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর এলাকার বাসিন্দা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সাগর নন্দিনী-২ জাহাজে গ্রিজার পদে কাজ করেন।
এদিকে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও জাহাজের মাস্টার রুহুল আমিন খান, সুপার ভাইজার চাঁদপুর সদরের মাসুদুল আলম বেল্লাল ও জাহাজের চালক পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সরোয়ার হোসেন।
জাহাজটি থেকে ১১ লাখ লিটার তেলের মধ্যে চার লাখ লিটার পেট্রল ও ডিজেল সরিয়ে ডিপোতে নেওয়া হয়েছে। আজ রবিবার সকাল থেকে নিখোঁজদের সন্ধানে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড ও বিআইডাব্লিউটিএর উদ্ধারকর্মীরা। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. রুহুল আমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন।
ইতিমধ্যে কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
এদিকে নিখোঁজদের স্বজনরা তাদের প্রিয়জনের খোঁজ পেতে সুগন্ধা নদীতে ট্রলার নিয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুঁজে বেড়াচ্ছে। কখনো আবার ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজে এসে আহাজারি করছে। তাদের অভিযোগ, পদ্মা অয়েল কর্তৃপক্ষ এবং উদ্ধারকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা তেল খালাস নিয়েই ব্যস্ত।
তারা নিখোঁজদের সন্ধানে তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না।
নিখোঁজ জাহাজের মাস্টার রুহুল আমিনের ছোট ভাই মাসুদ খান অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সঙ্গে শনিবার সকালেও কথা হয়েছে। দুপুরে জাহাজে আগুন লাগার পর থেকে তার সঙ্গে আর কথা বলতে পারিনি। জাহাজে আগুন লাগার পরে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা শুধু তেল কিভাবে ডিপোতে নেবে, তার ব্যবস্থা করছে। আমার ভাই যে নিখোঁজ, তার সন্ধানে তেমন কোনো ভূমিকা রাখছে না।
যারাই আসছে, তারাই তেল নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। আমার স্বজনের কোনো মূল্যই নেই তাদের কাছে। আমার ভাই যে কোথায় আছে, তার কোনো সন্ধান দিতে পারছে না। জীবিত হোক অথবা মৃত, আমার ভাইকে ফিরে পেতে চাই। আমার ভাইয়ের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত আমি এখান থেকে এক পা-ও নড়ব না।’
অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল কোস্ট গার্ডের অপারেশন অফিসার মো. শাফায়েত বলেন, ‘বিস্ফোরণের ফলে জাহাজের একটি পার্ট উড়ে পানির নিচে চলে গেছে। আমরা পানির নিচে ওই জিনিসটা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছি। পানির নিচে যেগুলো আছে, তা অত্যন্ত ধারালো আঁকাবাঁকা হয়ে আছে। সে কারণে গভীরে যাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজদের সন্ধানে সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। নদীতে প্রবল স্রোতের কারণে উদ্ধারকাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। তবু কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নিখোঁজদের স্বজনরা এখন মর্মাহত, তারা নানা কথা বলছে। আমরা চেষ্টা করছি অন্তত যেন মরদেহগুলো উদ্ধার করা যায়।’
পদ্মা অয়েল কম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে তেল ডিপোতে নেওয়ার কাজ করছি। চার লাখ লিটার তেল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, যাতে নিখোঁজদের খুঁজে বের করা যায়। এখানে আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। যত দিন পর্যন্ত লাশ পাওয়া না যাবে, তত দিন পর্যন্ত নদীতে অভিযান চালানো কথা বলা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সাগর নন্দিনী-২ নামের জাহাজটি ঝালকাঠি শহরের সুগন্ধা নদীর তীরে তেলের ডিপোতে তেল খালাস করা জন্য ১১ লাখ লিটার পেট্রল ও ডিজেল ভর্তি করে আসে। জাহাজটি নোঙর করা অবস্থায় নদীর অপর প্রান্তে শনিবার দুপুর ২টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে আগুন লেগে যায়। এতে দগ্ধ হন জাহাজের শ্রমিক শাকিল (৩৫), ফরিদুল আলম (৫০), ইকবাল হোসেন (২৭) ও মাইনুল ইসলাম হৃদয় (২৯)। তারা বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।