রেলে ট্রেন বেড়েছে, বেড়েছে যাত্রীও। কিন্তু সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। প্রতিবারই ঈদ সামনে রেখে যাত্রী দুর্ভোগ আর নিরাপত্তা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। দুর্ভোগ এড়াতে এবং টিকিট কালোবাজারি রোধে গত ঈদ থেকে শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু কালোবাজারি পুরোপুরি রোধ হয়নি, কমেনি দুর্ভোগও। এদিকে এত ঝক্কিঝামেলা পেরিয়ে অনলাইনে টিকিট মিললেও টিকিটধারী সব যাত্রী আসনে বসে গন্তব্যে যেতে পাারবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
গত ঈদেও শত শত যাত্রী টিকিট হাতে থাকলেও সিট পর্যন্ত যেতে পারেনি। ট্রেনের কেবিন কোচ ছাড়া সবকটি কোচের বেশিরভাগ আসন বিনা টিকিটের যাত্রী এবং আসনবিহীন যাত্রীদের দখলে থাকে। বিশেষ করে যারা কমলাপুর স্টেশনের পরে অন্য কোনো স্টেশন থেকে উঠেন, তাদের ক্ষেত্রে যুদ্ধ করে ট্রেনে উঠতে পারলেও সিটের কাছে যাওয়া এবং সিটে বসে থাকা যাত্রীকে তুলে দিয়ে বসা বেশ কঠিন হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঢাকামুখী ট্রেন বিমানবন্দর স্টেশনে বিরতি দিতেই শত শত বিনা টিকিটের যাত্রী ট্রেনে উঠে আগেই সিট দখল করে রাখে। ট্রেনগুলো কমলাপুর স্টেশনে আসার পথেই অধিকাংশ সিট দখল হয়ে যায়। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ঈদ থেকে ঢাকায় আসা আন্তঃনগর ট্রেনের বিমানবন্দর স্টেশনে বিরতি বাতিল করা হয়।
অনলাইনে টিকিট কাটা বহু যাত্রী বলেছেন, যাত্রীদের নির্ধারিত সিটে বসা নিশ্চিত করতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকেই।
সবাই কাটতে পারছেন না টিকিট : লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেনস্বল্পতা থাকায় আন্তঃনগর ট্রেনে প্রান্তিক মানুষ চড়তে পারছেন না। স্মার্টফোন ব্যবহারকারী এবং অনলাইন পারদর্শীদের একটি অংশই শুধু আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট কাটতে পারছেন। এদিকে টিকিট বিক্রয়ে অভিযোগের শেষ নেই। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিদিন ২৮ হাজার টিকিটের বিপরীতে মাত্র এক সেকেন্ডেই ১২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। আর ২৮ হাজার টিকিট কাটতে অনলাইনে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি হিট পড়ে।
এমন অবস্থায় শনিবার থেকে ঈদে অগ্রিম টিকিট কাটা যাত্রীরা ভ্রমণ শুরু করবেন। অভিযোগ উঠেছে, অনলাইনেও দিনের পর দিন চেষ্টা করে অধিকাংশ টিকিট প্রত্যাশী টিকিট কাটতে পারেননি। রেল ও সহজ কর্তৃপক্ষ বলছে, অনলাইনে প্রতিদিন প্রায় ২৮ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। একজন যাত্রী যদি ৪টি করে টিকিট কাটেন তাহলে ৭ হাজার যাত্রী প্রতিদিন অগ্রিম টিকিট কাটতে পেরেছেন। রেলের তথ্য বলছে, অধিকাংশ মানুষ চারটি করে টিকিট কেটেছেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ১০ দিন আগে অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয়।
১৪ থেকে ১৮ জুন ৫ দিনব্যাপী ২৪ থেকে ২৮ জুনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়। ঢাকা থেকে ৫ দিনে মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩টি টিকিট বিক্রি হয়। সারা দেশে টিকিট বিক্রি হয় ২ লাখ ২০ হাজার ৭৬৩টি।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ঈদ উপলক্ষ্যে শুধু কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশন থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ যাত্রী রাজধানী ছাড়বেন। প্রতিদিন ঢাকা থেকে ৪১ জোড়া (৮২টি) আন্তঃনগর এবং ৩৬ জোড়া (৭২টি) মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চলবে।
রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) মো. সফিকুর রহমান বলেন, অনলাইনে টিকিট নড়চড় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সীমিত টিকিটের বিপরীতে হাজার হাজার টিকিট প্রত্যাশী। যাদের অনেকেই টিকিট পাননি। ‘সহজ’ শুধু অপারেট করছে। আমরা ট্রেন অনুযায়ী সিট বরাদ্দ করে দিচ্ছি। যাত্রীদের সুবিধার্থে আমরা অতিরিক্ত কোচ এবং ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালাচ্ছি। এখন ২৪ জুন থেকে ঈদযাত্রা শুরু হবে। যাত্রী নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা বিভিন্ন স্টেশনে নিরাপত্তা জোরদার করেছি। বিনা টিকিটের যাত্রী রোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এক সেকেন্ডেই ৮ হাজার টিকিট শেষ : রেলওয়ের টিকিটিং পার্টনার সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি সূত্র জানায়, ৫ দিনে ঈদ অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩টি। সারা দেশে আসন বিক্রি হয় দুই লাখ ২০ হাজার ৭৬৩টি। টিকিট বিক্রি শুরুতেই অর্থাৎ মাত্র ১ সেকেন্ডেই একসঙ্গে ১২ হাজার টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। সেই হিসাবে ২-৩ মিনিটেই সব টিকিট বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু কিছু কিছু ট্রেনের সাধারণ টিকিট ঘণ্টার পর ঘণ্টা থেকে যায়। যা ৫-৭ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। এদিকে টিকিটপ্রত্যাশীদের অনেকের অভিযোগ, সকাল ৮টায় আসন বিক্রি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগেই অনেক আসন শূন্য দেখা যায় ওয়েবসাইটে।
বিশেষ বিশেষ আসন সংখ্যা আগেই কেটে রাখা হয়। এমন অভিযোগের উত্তরে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহআলম কিরণ শিশির বলেন, টিকিট বিক্রয়ে নড়চড় হওয়ার কোনো কারণই নেই। আমরা শতভাগ টিকিট অনলাইনে বিক্রি করেছি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, আমরা যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সতর্কাবস্থায় আছি। শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চালাতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।