পেয়ার আহাম্মদ চৌধুরী, ফেনী জেলা প্রতিনিধি:
ফেনীর দাগনভূঁঞার রাজাপুর ইউনিয়নে বড় ভাইকে পিটিয়ে কড়াইয়ের গরম তেলে ফেলে ঝলসে হত্যা মামলায় ছোট ভাইয়ের ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।মঙ্গলবার ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছা আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এসময় রায় শুনে সাজাপ্রাপ্ত আসামি নিজাম উদ্দিনকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা যায়।
নিহত জহিরুল হক জহিরের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার জানান, এ রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন, তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।
অপরদিকে সাজাপ্রাপ্ত ছোট ভাই নিজাম উদ্দিনও এ রায়ে সন্তুষ্ট নন, তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহমেদ জানান, এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট, তবে কাগজপত্র পর্যালোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আদালত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এর আগে রোববার (৩০ জানুয়ারি) মামলার একমাত্র আসামি নিজাম উদ্দিনের উপস্থিতিতে যুক্তিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি হাফেজ আহম্মদ ও আসামিপক্ষে শরফুদ্দিন মাহমুদ মানিক তাদের স্বপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ সকালে দাগনভূইয়া উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের সাপুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে চায়ের দোকানে জহিরুল হক জহির আসা মাত্র কয়েকজন তাকে পিটিয়ে আহত করে। একপর্যায়ে কড়াইয়ের গরম তেলে ফেলে দেওয়া হয়। আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
চিকিৎসা দিয়ে ২৭ মার্চ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় মারা যান জহির। এ ঘটনায় তার ভগ্নিপতি ফজলুল করিম বাদি হয়ে ৪ এপ্রিল রাজধানীর শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে জহিরের স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রিমা বাদি হয়ে মৃত নিজাম উদ্দিনকে আসামি করে দাগনভূইয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলাটি প্রথমে তদন্তের দায়িত্ব পান থানার এসআই সাইফুল ইসলাম। তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় এসআই মশিউর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি নিজাম উদ্দিনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন। ওই বছরের ১ নভেম্বর মামলাটি পুনঃতদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর একই বছরের ২০ ডিসেম্বর মামলাটির চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মো. মোবারক হোসেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ১৩ জন সাক্ষীকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। গত বছরের ১১ অক্টোবর আসামি নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার কাজ শুরু হয়। মামলা দায়েরের পর আসামি নিজাম উদ্দিন গ্রেপ্তার হয়। নিজাম ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
Facebook Comments