টানা ৩৪ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে হেরে গেলেন ডাঃ সামিনা। বৃহস্পতিবার সকালে লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যে নিভে যায় তার জীবনপ্রদীপ। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর কাজির দেউড়ি এলাকায় দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেঁচে থাকার ক্ষীণ সম্ভাবনা দেখছিলেন তার স্বজনরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আর ফিরলেন না।
চট্টগ্রামের আইসিইউ চিকিৎসক সামিনার জীবন নিভে গেল আইসিইউতেই। সিএনজিচালিত অটোরিক্সার ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন ডাঃ সামিনা আক্তার। এই ঘটনায় সিএনজি চালককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে রিক্সাযোগে বাসায় ফিরছিলেন ডাঃ সামিনা আক্তার। কাজির দেউড়ি এলাকায় হঠাৎ করে একটি সিএনজি ধাক্কা দেয় রিক্সাকে। সঙ্গে সঙ্গে দুমড়েমুচড়ে যায় রিক্সা, আর সড়কে ছিটকে পড়েন সামিনা। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করান।
ডা. সামিনা নগরীর দুটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চাকরি করতেন। তিনি অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চিকিৎসক ছিলেন। তিনি ইউএসটিসি মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। চট্টগ্রামের বেসরকারি সাউদার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা কর্মকর্তা ছিলেন তিনি।
ডা. সামিনা গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর মেহেদীবাগের বাসায় ফেরার সময় তিনি আহত হন। নগরীর কাজীর দেউড়ি র্যাডিসন ব্লু হোটেলের সামনে সড়কে দ্রুতগামী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা তাঁকে বহনকারী রিকশায় ধাক্কা দেয়। এ সময় তিনি মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান।
চমেকের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আইসিইউ ৫ নম্বর শয্যায় লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন ছিলেন ডা. সামিনা আকতার। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ভর্তির পর সেদিন রাত ১টা থেকে প্রায় ৪টা পর্যন্ত তাঁর মস্তিষ্কে জটিল অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। ওই সময় তাঁকে চার ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়।’
ডা. সামিনার ছোট ভাই হারিছ আলম জানান, ওই দিন রাতে একটি অনুষ্ঠান শেষে বাসায় ফেরার পথে দুর্ঘটনা ঘটেছিল।
ডা. সামিনার গ্রামের বাড়ি ফেনী সদরের ধর্মপুর ইউনিয়নের মজলিসপুর গ্রামে। তার স্বামী মীর ওয়াজেদ আলীও পেশায় একজন চিকিৎসক। তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে রাফা ওয়ালিয়াহ নবম শ্রেণিতে পড়ে এবং ছেলে মীর ওয়ালিফ সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর মায়ের সঙ্গে দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে নগরীর মেহেদীবাগ থাকতেন ডা. সামিনা। মেহেদীবাগ এলাকার সিডিএ মসজিদে গতকাল জানাজা শেষে ফেনীতে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফনের কথা রয়েছে।
এ ঘটনায় ডা. সামিনার বড় ভাই এস এম নুর আলম নগরীর কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সিদ্দিকুর রহমানকে একমাত্র আসামি করা হয়। গ্রেপ্তারের পর চালককে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Facebook Comments